স্টিভেন জেরার্ডদের মতো খেলোয়াড় শতাব্দীতে একবারই জন্মায়। তারা শুধু ট্রফির জন্য খেলে না, হৃদয়ের টানে খেলে। তাদের ভালোবাসা নিখাদ, তাদের আত্মত্যাগ প্রশ্নাতীত। রিয়াল মাদ্রিদের দরজা সবসময় তার জন্য খোলা ছিল, কিন্তু তিনি কখনো ফিরে তাকাননি। কারণ লিভারপুলই ছিল তার ঘর, তার আত্মা।
কিন্তু সবাই তো আর জেরার্ড হতে পারে না...
আমরা ভেবেছিলাম, ট্রেন্ট আলেক্সান্ডার-আর্নল্ড সেই ঘরের ছেলে, যে ক্লাবের প্রতি নিঃস্বার্থ ভালোবাসা দেখাবে। যে একদিন বাহুতে আর্মব্যান্ড বেঁধে অ্যানফিল্ডের সামনে দাঁড়াবে, আমাদের গর্ব হয়ে উঠবে। যে "The Kop" এর সামনে বুক চাপড়ে বলবে, "আমি এখানেই থাকবো!"
আমরা বিশ্বাস করেছিলাম, তার রক্তে লিভারপুল বইছে।
কিন্তু আজ?
আজ সে আমাদের ছেড়ে চলে যাচ্ছে।
যাওয়ার ইচ্ছা থাকতেই পারে। মাদ্রিদ তো ছোটখাটো কিছু নয়। ফুটবল ইতিহাসের সবচেয়ে সফল ক্লাব, যেখানে খেলাটা অনেকের স্বপ্ন। সেখানে গিয়ে ক্যারিয়ার গড়াটা অন্যায় নয়।
কিন্তু ট্রেন্ট শুধু চলে যায়নি, সে আমাদের ধোঁকা দিয়েছে।
"অ্যালিস্টার পারলো, ট্রেন্ট পারলো না"
ম্যাক অ্যালিস্টার ব্রাইটনের একাডেমির কোনো খেলোয়াড় ছিল না, আর খুব বেশি বছরও সেখানে খেলেনি। তবুও, সে জানত, ছয় মাস পরেই লিভারপুলে চলে আসবে।সে চাইলে অপেক্ষা করতে পারত, ফ্রি এজেন্ট হয়ে বড় অঙ্কের সাইনিং বোনাস নিতে পারত।
কিন্তু সে তা করেনি।
সে জানুয়ারিতে নতুন চুক্তি করল, যাতে ব্রাইটন অন্তত তার বদলে কিছু ট্রান্সফার ফি পায়।
কিন্তু ট্রেন্ট?
সে জানত, সে মাদ্রিদে যাবে। তবুও সে চুক্তি বাড়ায়নি, যাতে লিভারপুল কিছু পেতে পারে।
সে যদি সত্যিই ক্লাবকে ভালোবাসত, তাহলে অন্তত ৬ মাসের জন্য হলেও চুক্তি এক্সটেন্ড করত, যাতে লিভারপুল কিছু ট্রান্সফার ফি পায়।
অথবা সে গত গ্রীষ্মেই চলে যেতে পারত। কিন্তু সেটা করলে তো সে ফ্রি এজেন্ট থাকত না, অতিরিক্ত সাইনিং বোনাস পাওয়া সম্ভব হতো না!
তাই সে অপেক্ষা করল।
কিন্তু অপেক্ষার মাঝে সে কী করল?
মিডিয়ায় ক্লাবের প্রতি ভালোবাসা দেখালো, ক্যাপ্টেন হওয়ার স্বপ্নের কথা বলল, এমনভাবে কথা বলল যেন ভবিষ্যতে লিভারপুলেই থাকবে। অথচ ভেতরে ভেতরে সে জানত, সে বিদায় নেবে। শুধু বিদায় নয়, ক্লাবকে কিছু না দিয়েই চলে যাবে।
"তুমি সুযোগও দিলে না, ট্রেন্ট!"
লিভারপুল থেকে অনেকেই বিদায় নিয়েছে।
ববি ফিরমিনো সে-ও তো আমাদের ছেড়ে গেছে। কিন্তু আজও আমরা তাকে ভালোবাসি, গর্ব নিয়ে মনে করি। তার বিদায়ে আমাদের চোখে জল এসেছিল, কিন্তু সেই জল অভিমানের ছিল না, ভালোবাসার ছিল।
কিন্তু তুমি, ট্রেন্ট?
তুমি সেই সুযোগটাও রেখে গেলে না।
শুধু ববি নয়, আরও কত তারকা লিভারপুল ছেড়েছেন স্টিভেন জেরার্ড, জাবি আলোনসো, লুইস সুয়ারেজ, সাদিও মানে কিন্তু তারা এমনভাবে গেছে যে, আজও আমরা গর্বের সাথে তাদের স্মরণ করি।
তারা হয়তো ক্লাব ছেড়েছিল, কিন্তু কখনো লিভারপুলের প্রতি সম্মান হারায়নি।
কিন্তু তুমি এটা কী করলে, ট্রেন্ট!
তুমি চাইলেই অন্যভাবে যেতে পারতে। চাইলে আমাদেরও গর্ব করার সুযোগ দিতে পারতে। চাইলে এমনভাবে বিদায় নিতে পারতে, যাতে আমরা বলতাম যাও ট্রেন্ট, তুমি আমাদের গর্ব!
কিন্তু তুমি সে পথ বেছে নাওনি।
তাই আজ আমরা শুধু চুপ করে আছি, অভিমান নিয়ে তাকিয়ে দেখছি তোমার চলে যাওয়া।
বিদায়ের পর মানুষ কিভাবে মনে রাখবে? ইউর্গেন ক্লপ বলেছিলেন,
"It's not so important what people think when you come in. It's much more important what people think when you leave."
ট্রেন্ট যখন প্রথম দলে উঠে এসেছিল, আমরা সবাই গর্ব করেছিলাম। ভেবেছিলাম, আমাদের নতুন জেরার্ড চলে এসেছে। কিন্তু আজ যখন সে যাচ্ছে, তখন আমরা কী ভাবছি?
একটা বিশ্বাসভঙ্গ। একটা অভিমান। একটা কষ্ট, যা শুধু ফ্যানেরাই বোঝে।
"তুমি কখনোই The Kop এর ভালোবাসা ফিরে পাবে না"
ট্রেন্ট, তুমি নতুন ক্লাবে যাবে, নতুন ট্রফি জিতবে। কিন্তু তুমি যা কখনোই ফিরে পাবে না, তা হলো অ্যানফিল্ডের সেই নিঃশর্ত ভালোবাসা।
তুমি কখনোই আর সেই রাতে "You’ll Never Walk Alone" শুনে গায়ে কাঁটা দেওয়ার অনুভূতিটা পাবে না।
তুমি ট্রফি জিততে পারো, কিন্তু "The Kop" তোমার নামে আর কখনো গর্জে উঠবে না।
তুমি আমাদের ভুলে যেতে চাইলে ভুলে যেতে পারো, কিন্তু আমরা তোমাকে ভুলবো না।
তুমি আমাদের হৃদয়ে থাকবে, তবে ভালোবাসার জায়গায় নয়, অভিমানের জায়গায়।
ভালো থেকো, ট্রেন্ট. তুমি লিভারপুল ছেড়েছ, কিন্তু লিভারপুল তোমাকে নয়।
আর হ্যাঁ, লয়্যালটি সবার জন্য নয়. "You’ll Never Walk Alone," কিন্তু কিছু পথ তুমি একাই হাঁটবে।